ঢাকা ১০ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৫শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৩২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২০
ফয়সল আহমদঃ
ফারুক আহমদ আমার বাল্যবন্ধু। সহপাঠি উত্তর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী জনপদ জালালাবাদ ইউনিয়নের রায়ের গাঁও তার জন্ম।স্কুল লাইফে ৫ মাইল দূরবর্তী কর্দমাক্ত দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে বিদ্যালয়ে গমনকারি আমার বন্ধুটি বরাবরই ক্লাসের প্রথম স্থানটি দখল করে রাখতো। তৎকালীন সুবিধাবঞ্চিত জনপদের একমাত্র উচ্চবিদ্যালয় যেখানে গোঁজামিল দিয়ে চলতো শ্রেণী কার্যক্রম, সংকটের ঘেরাটোপে নিমজ্জিত সে বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে সেরা রেজাল্টটা বাগিয়ে নিল ফারুক।সে ফার্স্ট ডিভিশন পেলো কয়েক সাবজেক্টে লেটার নিয়ে।ফারুক অংকে ভালো,ফারুকের বাংলায়,ইংরেজিতে, ভূগোলে,পদার্থ,রসায়ন তথা সব সাবজেক্টে সমান মুন্সিয়ানা ছিল।গাও গেরামের সবাই,স্কুলের শিক্ষক,সুহৃদ,ব্রাত্যজন সবাই তখন ফারুকের মধ্যে ভবিষ্যতের একজন ডাক্তার,বিজ্ঞানী,প্রকৌশলীর ছায়া দেখতে পেলো।অতঃপর কলেজ জীবন। ফারুক মনযোগি ছাত্র,ফারুক মেথ,ফিজিক্স,কেমিস্ট্রি,ইংলিশ সব বিষয়ে আবারো মুন্সিয়ানা দেখাতে লাগলো।ফারুক এগিয়ে চললো- – – -!
২
একদিন দেখি কলেজ ক্যাম্পাসে একটি মিছিল এগিয়ে আসছে।মিছিলটির অগ্রভাগে “জয় বাংলা” স্লোগান আর ছাত্রসমাজের দাবি আদায় সম্বলিত নানা স্লোগানে একটি কণ্ঠ কাঁপিয়ে তোলছে ক্যাম্পাস।মিছিলটি কাছে আসতেই দেখি আমার বন্ধু ফারুক তার কণ্ঠের, চিৎকারের, জাদুতে মাতিয়ে তোলছে সতীর্থদের।যে মিছিলে ফারুকের সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছে আজকের আমার বন্ধু আজাদুর রহমান আজাদ,রনজিত সরকার,সহ অনেকে।ফারুক ক্লাসে যায়!!!! ফারুক মিছিলে যায়!!!ফারুক ক্যাম্পাসে মিছিলের স্লোক ধরে, সেখান থেকে টিলাগড় পয়েন্ট, তার পর আন্দোলনের সুতিকাগার কোর্টপয়েন্টে এসে থিতু হয়।ফারুক মিছিলে যায়,ফারুক ক্লাসে যায়না,মিছিলের সর্বগ্রাসি নেশায় ফারুক আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।বুকে জনকের(বঙ্গবন্ধুর) আদর্শ লালন করে মানুষের অধিকার আদায়ের বিপ্লবি চেতনায় উদ্বুদ্ধ ফারুক রাজপথ কাঁপায়।
৩
তখন দেশ ছিল দস্যুর দখলে।স্বৈরাচার ক্ষমতায়।পথে পথে উর্দ্দি ধারি সেপাই শান্ত্রীদের বিপজ্জনক আতঙ্ক জাগানো উপস্থিতি।বন্ধুকের নলের মুখে বিপন্ন গণতন্ত্র মুক্তির লক্ষ্যে আরো অসংখ্যদের নিয়ে ফারুক রাজপথে মিছিলে নামে।তারপর স্বৈরাচারের হুকুমের গোলামেরা কি করেনি তখন? ফারুক মার খায়,আহত হয় তবুও দমেনা।মিছিল তোলে গগণ বিধারি “জয়——বাংলা”।
৪
সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে আমরা ফারুককে দাঁড় করাই।ফারুক দাড়িয়ে থাকে।যা করার আমরাই করি।বিপুল ভোটে ছাত্র সংসদের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয় ফারুক।এটা কারচুপি বা রাতের ভোট ছিলনা।এটা ছিল স্বতঃস্ফুর্ত নির্বাচন।দল মত নির্বিশেষে তখন সকলের মায়া কেড়ে নেয় ফারুক।
৫
কলেজ জীবন শেষে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি জীবনযুদ্ধে।ফারুক থেকে যায় পিতার(বঙ্গবন্ধুর) আদর্শ নিয়ে রাজনীতিতে।তারপর তৈরি হয় তার এক পাল শত্রু।ফারুকের অগ্রযাত্রা থামাতে হবে।মিছিলে,বক্তৃতায়,রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তাকে হারানে অসম্ভব।তাকে লাইনচ্যুত করো!!!!! স্ববিরোধি,আত্মবিধ্বংশি নেশায় সংক্রমিত করা হলো তাকে।ফারুক সংক্রমিত হলো।সে তলিয়ে যেতে থাকলো অচেনা এক অন্ধকার গহ্বরে।একটা কঠিন ঊর্ণনাভের জ্বালে আটকা পড়লো ফারুক।অসংলগ্ন জীবনাচারে সম্পৃক্ত হয়ে মেধাবি ফারুক রাজনীতির নষ্ট কুশীলবদের, মির্জাফরের প্রেতাত্মাদের ষড়যন্ত্রের বলী হলো।
৬
দিন যায়,ক্ষন যায়,মানুষ বদলায়।কিন্তু ফারুক বদলায়না।সে পিতার(বঙ্গবন্ধু)আদর্শ নিয়ে পড়ে থাকে রাজপথে,।তার অগ্রজ মাসুক আহমদ ছিলেন আরেক প্রতিবাদি প্রজন্ম।হায়েনারা মেরে ফেলেছে তাকে।ফারুক এখন ছায়াহীন একা।স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোন এক চিলেকোটায় চলছে তার দিনাতিপাত।
বর্ণপাল্টিয়ে, বোল পাল্টে প্রতারক পল্টিবাজরা অনেকে আজ খাঁটি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক সেজে সরকারের রস আর জনগনের হালুয়া রুটি কেড়ে নিয়ে বিত্ত বৈভবে দিন কাটাচ্ছেন।রাষ্ট্রের সম্পদ লুণ্ঠন করে আঙ্গুল ফোলে বটগাছে পরিনত হচ্ছেন।কিন্তু ফারুকের মতো নগন্য সাধারনরা আস্তাকুড়ে থেকেও পিতার আদর্শ বুকে লালন করে স্বপ্ন দেখে মানুষের মুক্তির।
৭
আজীবনের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক আমার বন্ধু ফারুক রাজনীতি করে কিছু পায়নি।সে বিসর্জন দিয়েছে তার যৌবন,তার মেধা,তার স্বর্ণালী সময়,তার অফুরন্ত সম্ভাবনা।রাজনীতিতে নিঃস্ব হওয়া এক মুকুটহীন সম্রাট ফারুক।
সময়ের এ সাহসি প্রজন্ম রাজনীতিতে যথাযথ মূল্যায়িত হোক।এ প্রত্যাশা করি।
চেয়ারম্যানঃ নারী নেত্রী বিলকিছ নূর
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এম ইজাজুল হক ইজাজ
অফিসঃ বালুচর সিলেট
ই-মেইল ezazjournalist@gmail.com
ezazulpress@gmail.com
Mobil. 01712873715
Design and developed by AshrafTech