‘কদম আলীর বিষের বোতল’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান বক্তারা কবি তারানা রেজা চৌধুরীর কবিতায় সমাজের বিচিত্র বিষয় ফুটে উঠেছে শৈল্পিক সৌন্দর্যতায়.

প্রকাশিত: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২২

‘কদম আলীর বিষের বোতল’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান বক্তারা  কবি তারানা রেজা চৌধুরীর কবিতায় সমাজের বিচিত্র বিষয় ফুটে উঠেছে শৈল্পিক সৌন্দর্যতায়.

কবি তারানা রেজা চৌধুরী সৃজন ও মননে আদর্শগামী। তাঁর কবিতায় জীবনের বাস্তববাদিতা এবং সংগ্রামশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। সমাজের বিচিত্র বিষয়ও তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে শৈল্পিক সৌন্দর্যতায়। তিনি যে জীবনকে অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে দেখেন, তাঁর প্রক্ষপণ কবিতায় বিমূর্ত হয়ে ওঠে। সহজ-সরল এবং সহজবোধ্য ভাষার প্রকরণ তাঁর কবিতাকে করেছে গতিসঞ্চারী ও সময়োপযোগী।
‘ভিশন সিলেট’ এবং পান্ডুলিপি প্রকাশন, সিলেট-এর যৌথ উদ্যোগে কবি, প্রাবন্ধিক ও সমাজচিন্তক তারানা রেজা চৌধুরীর ‘কদম আলীর বিষের বোতল’ কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
দৈনিক সিলেট সংলাপ’র প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক- প্রকাশক, বিশিষ্ট সাংবাদিক-লেখক-গবেষক ও বহুগ্রন্থ প্রণেতা মুহাম্মদ ফয়জুর রহমানের সভাপতিত্বে গত বুধবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায়,সিলেট নগরীর হোটেল ডালাস-এর কনফারেন্স হলে আয়োজিত প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি তারানা রেজা চৌধুরীর জীবনসঙ্গী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমত আহমদ চৌধুরী বিপি (অব.), বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক-গবেষক, এমসি কলেজ, সিলেট-এর উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. আজিজুর রহমান লসকর, শিক্ষাবিদ ও কবি অধ্যক্ষ কালাম আজাদ, প্রবীণ সাংবাদিক-কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ও কবি লে. কর্নেল সৈয়দ আলী আহমদ (অব.), বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, লেখক-গবেষক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম এবং গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইছবাহ উদ্দিন।
গ্রন্থকারের অনুভূতি প্রকাশ করেন কবি ও প্রাবন্ধিক তারানা রেজা চৌধুরী।
নাট্যকার ও আবৃত্তিশিল্পী বাবুল আহমদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন এবং গ্রন্থের উপর আলোচনায় অংশ নেন কবি বেলাল আহমদ চৌধুরী, কবি বাছিত ইবনে হাবীব, পরিবেশবাদী সংগঠক ডা. মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী বাহার, কবি ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি সিলেট এর সাবেক জেলা শিশু বিষরক কর্মকর্তা মাহবুবুজ্জামান চৌধুরী, ওয়ান ব্যাংক ইসলামপুর শাখার ম্যানেজার রাফে শাফকাত আদিল, ডা. সৈয়দ আলমগীর শাফওয়াত এবং ইরমা তাশফি মোরশেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে কাব্যগ্রন্থের উপর লেখক-প্রকাশক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল লিখিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি সেনুয়ারা আক্তার চিনু। অনুষ্ঠানের শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পান্ডলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী, লেখক- প্রকাশক বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল।
কবি তারানা রেজা চৌধুরীর ‘কদম আলীর বিষের বোতল’ কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি পপি রশীদ, মিরনা রেজা চৌধুরী ও কবি মাসুমা টফি একা।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে কবি তারানা রেজা চৌধুরীকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা হয় এবং ভিশন সিলেট ও পান্ডুলিপি প্রকাশনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে কেক কাটা হয়।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইসমত আহমদ চৌধুরী বিপি (অব.) বলেন, কবি তারানা রেজা চৌধুরীর একটি অন্তর্দৃষ্টি আছে। আমরা যা দেখি না, তাঁর দৃষ্টিতেই সেটাই প্রতিভাত হয়। কবিতায় এর প্রতিফলন ঘটে। অত্যন্ত মেধাবী ও সাহসী কবি তারানা রেজা চৌধুরীর মননচেতনায় যে সমাজোপলব্ধি ধরা পড়ে, কবিতায় তার সার্থক প্রকাশ ঘটে।
শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর মো. আজিজুর রহমান লসকর বলেন, বিজ্ঞান হচ্ছে জীবনের সামগ্রিক জ্ঞান। কোনো ক্ষেত্রই বিজ্ঞান থেকে দূরে নয়। কবি তারানা রেজা চৌধুরীর কবিতায় বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারার একটি প্রয়াস লক্ষ করা যায়। যা তার কবিতায় নতুনত্ব এনে দিয়েছে। জীবনের বিচিত্র বিষয় নিয়ে রচিত কবিতাগুলো তাঁর কাব্যগ্রন্থকে সমৃদ্ধ করেছে।
শিক্ষাবিদ ও কবি অধ্যক্ষ কালাম আজাদ বলেন, কবি তারানা রেজা চৌধুরীর কবিতায় সাম্যবাদী চেতনা ও স্বপ্নবাজ প্রকৃতির গতিময়তা লক্ষ করা যায়। তিনি উত্তরাধুনিক কবিদের মতো কবিতা রচনায় প্রবৃত্ত হননি। বিশ্বাস এবং সৌন্দর্যকে তিনি তার কবিতায় তুলে ধরেছেন। যে বিশ্বাস মানুষের অবলম্বন, সেটাকে তুলে ধরে তিনি অনন্য কাজ করেছেন।
প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী বলেন, কবি তারানা রেজা চৌধুরীর কবিতায় নতুনত্ব আছে। সত্য, সৌন্দর্য এবং বিশ্বাসের প্রতিফলন আছে। এ বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই তাঁর যাপিত জীবন। জীবনের প্রচ্ছন্ন আলোর প্রতিফলনে তার কবিতা সাহিত্যে প্রতিধ্বনিত হবে।
শিক্ষাবিদ ও কবি লে. কর্নেল সৈয়দ আলী আহমদ (অব.) বলেন, কবি তারানা রেজা চৌধুরীর মানস গঠিত হয়েছে জীবনভাবনা নিয়ে। এ ভাবনাকে তিনি উপমা, উৎপ্রেক্ষা এবং চিত্রকল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করেন। এর ফসল হচ্ছে ‘কদম আলীর বিষের বোতল’ কাব্যগ্রন্থটি।
গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইছবাহ উদ্দিন বলেন, কবি তারানা রেজা চৌধুরীর কবিতায় স্বপ্নের কথা ফুটে উঠেছে। তিনি নিজেও স্বপ্নবাজ ব্যক্তিত্ব। স্বপ্ন দেখেন এই সমাজটি সাম্যতায় ভরে উঠবে। এ স্বপ্নকে কবিতায় তুলে ধরে তিনি অমর হওয়ার রাস্তাকে উন্মোচন করলেন।
গ্রন্থকারের অনুভূতি প্রকাশ করে কবি তারানা রেজা চৌধুরী বলেন, আজকের এই সময়টা আমার জন্য ভিন্ন এক অনুভূতির এবং ভালোলাগার। জীবনে বহু প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছি। আর এগুলোকে নিয়েছি জীবনের এডভেঞ্চার হিসেবে। কবিতা এবং সৃজনশীলতাকে আপন করেছি কেবল নাগরিক দায়বদ্ধতা থেকে। সমাজের অসঙ্গতি, জীবন ও জগতের বাস্তবতা আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। কবিতার মাধ্যমে চেষ্টা করেছি, সহজ-সরল এবং প্রাঞ্জল ভাষায় এগুলোকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে। আমার চিন্তার প্রধান অনুষঙ্গ সাম্যবাদ ও সার্বজনীন বিশ্বাসবোধকেও তুলে ধরেছি কবিতায়। আশা করি, এ কবিতাগুলো মানুষকে সভ্যতার অপব্যবহার থেকে দূরে রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক সিলেট সংলাপ’র সম্পাদক-প্রকাশক ও লেখক-গবেষক মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান বলেন, কবি তারানা রেজা চৌধুরী এক অসাধারণ প্রতিভা। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁকে চিনি। মেধাবী কবি তারানা রেজা চৌধুরী যে চিন্তায় এবং আদর্শে জীবনকে দেখেন, এরই প্রতিফলন ঘটান তাঁর কবিতায়। এটাই তাঁর কবিতার সৌন্দর্যময়তা। তাঁর কবিতার পথচলা আরো বেগবান ও সুদূরপ্রসারী হোক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

shares